Ads



প্রমাণ সম্পর্কে যোগ দর্শনের বিস্তারিত আলোচনা।

হিন্দুধর্ম শাস্ত্র গুলো কোনো কাল্পনিক গাল গল্প নয়। এগুলো সম্পুর্ন রূপে বিজ্ঞান ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার বিষয়। কুসংস্কার বা কাল্পনিক থিয়োরির কোনো স্থান নেই। হাতে কলমে পরীক্ষা করে সবাই সত্য বিবেচনা করতে পারেন। যখন কোনো কিছুকে প্রমাণ বলা হয়, সেটিই প্রমাণ নয়, আরোপ। সেই আরোপ প্রমাণ হাওয়ার পেছনে সঠিক যুক্তি থাকতে হবে। সেই নিয়েই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন।

Patanjali Yog

 আজকের এই প্রতিবেদনটি পতঞ্জজলির যোগসূত্রের প্রথম সাতটি সূত্রের ওপর লেখা হচ্ছে। আসুন জেনে নেই: 

2। যোগ হল চিত্ত ও বৃত্তির সর্বত্রভাবে নিরোধ বা স্থির হওয়া।

3। সেই সময় দ্রষ্টা (অর্থাৎ সাধক) আপন স্বরূপে স্থিত হওয়া।

4। অন্য সময়ে যোগী বৃত্তির বিক্ষেপ দারুন ক্লিষ্ট ও অক্লিষ্ট কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে থাকে।

4,5&6। এই বৃত্তি গুলো:

     1. প্রমাণ, 2 বিপর্যয়, 3. বিকল্প, 4. নিদ্রা, এবং 5. স্মৃতি। এগুলোর সঙ্গে ক্লিষ্ট এবং অক্লিষ্ট জড়িত। এগুলো জানার বিষয়।

7। প্রমান: প্রত্যক্ষ, অনুমান এবং আগম এই তিনটি হলো প্রমাণ।

প্রত্যক্ষ প্রমাণ: মন বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয় দ্বারা গ্রাহ্য যত পদার্থ আছে তাদের অন্তঃকরণ ও ইন্দ্রিয়র সাথে কোন অবিচ্ছিন্ন সম্বন্ধ হওয়ার ফলে যে অভ্রান্ত বা সংশয় রহিত জ্ঞান, তা প্রত্যক্ষ অনুভবের বিষয় হওয়ায়। এগুলো প্রত্যক্ষ প্রমাণ।

ভ্রম বসত ছায়াকে ভূত, দড়িকে সাপ মনে হয়। কিন্তু ভ্রমের নিরসন হলে। প্রত্যক্ষ দর্শন হলে ভুত সাপ উভয়ের ভয় দূর হয়। সেজন্য এটি একটি প্রমাণ বৃত্তি। 

আধ্যাত্মিক দর্শনে জগত সেরকমই মায়াময়। যাহা সুখের বিষয় বলে মনে হয়, তাহা দুঃখের কারণ। যাহা দুঃখের কারণ বলে মনে হয়, তাহাই সুখ দেয়।

যখন প্রত্যক্ষ দর্শনের দ্বারা সাংসারিক পদার্থের ক্ষণভঙ্গুরতা সম্বন্ধে নিশ্চয়তা জন্মায় অথবা সর্বত্রভাবে সেখানে দুঃখের অনুভব হয় এবং সাংসারিক পদার্থের প্রতি বৈরাগ্য আসে। যা চিত্তের বৃত্তি নিরোধ করতে সাহায্য করে। এর ফলে যোগ সাধনায় মানুষের শ্রদ্ধা উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। —এই সাংসারিক পদার্থ লাভে আসক্তি জন্মায় ইহাকে ক্লিষ্ট বলে। অনাসক্তির ফলে যে জ্ঞানরূপ বৈরাগ্য হয়। তাহা ক্লিষ্ট। একই ক্লিষ্ট বা অক্লিস্টর উর্ধ্বে যা কিছু আছে, সেটাই আত্ম স্বরূপ।

অনুমান প্রমাণ: কোন প্রত্যক্ষ দর্শনের কারণ যুক্তি দ্বারা যে অপ্রত্যক্ষ পদার্থের স্বরুপ জ্ঞান জন্মায়। তাহা হলো অনুমান প্রমাণ। জঙ্গলে ধোঁয়া দেখে আগুনের অনুমান হওয়া, নদীর জলে বান দেখে দূর দেষে বৃষ্টিপাতের ভান হওয়া ইত্যাদি হলো অনুমান প্রমাণ।

সেই ভাবে অন্য ব্যাক্তির মৃত্যু দেখে জীবনের অনিত্য তার অনুমান হওয়া। ভূমিকম্পে বিধ্বংস দেখে মহা প্রলয়ের অনুমান হওয়ায় এবং জগতের ক্ষণস্থায়ী বিষয় সম্পর্কে বৈরাগ্য উৎপন্ন হওয়ায় অক্লেশ জন্মায়। 

আগম প্রমাণ: বেদ, পুরাণ, বা অপ্ত ব্যক্তিদের (Specialized person's) বচনকে আগম প্রমাণ বলা হয়। যেমন, যদি অর্থনৈতিক জ্ঞান, অর্থনৈতিকবীদের কাছেই পাওয়া যায়। কোনো মাতালের কাছে নয়। তেমনই অধাত্মিক বা ধার্মিক ব্যক্তির কাছেই ধর্মের তত্ত্ব শ্রবন করা উচিত। নেতা, মন্ত্রী বা শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তির কথার কোনো গুরুত্ব নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন